অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বগুড়ায় শতাধিক ঢালাই কারখানার সব বর্জ্য ফেলে রাখা হতো কারখানার বাইরে স্তূপ করে। সপ্তাহ শেষে জায়গার সংকুলান হওয়া কঠিন হয়ে পড়ত। বাধ্য হয়ে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা অপসারণে নিয়োজিত ট্রাকচালকদের টাকাপয়সা দিয়ে সেসব সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। সেই বর্জাই এখন আর ফেলনা নয়, এই বর্জ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ইট ।
বগুড়ার জেডএইচ স্টার ব্রিকস অ্যান্ড ব্লকস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঢালাই কারখানার ফেলে দেওয়া বর্জ্য ব্যবহার করে প্রথম পরিবেশবান্ধব ইট ও ব্লক তৈরি শুরু করে সবার নজরে আসে। ‘হলো ব্রিকস’ এই ইট প্রস্তুত করতে এতদিন সিমেন্ট, বালু ও পাথরের কুচি ব্যবহৃত হলেও এখন পাথরের কুচির পরিবর্তে ফার্নেস স্লাগ নামের বর্জ্যের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এতে এক দিকে যেমন এই বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষণ রোধ হচ্ছে, তেমনি উন্নত এই ইট তৈরির কাঁচামালও এখন সহজলভ্য হয়েছে।
জেডএইচ স্টার ব্রিকস অ্যান্ড ব্লকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাখলিমুর রহমান টিটু জানান, ভারতের বেঙ্গালুরু ভ্রমণে গিয়ে তিনি সেখানে ঢালাই লোহার কারখানার বর্জ্য দিয়ে ইট তৈরির প্রযুক্তি দেখতে পান। বগুড়ায় অনেক ফাউন্ড্রি বা ঢালাই কারখানা থাকলেও সেসব কারখানার বর্জ্য দিয়ে কোনো কাজ হয় না বলে তিনি জানতেন। তাই তিনি সেখান থেকে ফিরে নিজে এই কাজটি করার চিন্তা করেন। এ বিষয়ে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (এইচবিআরআই) যোগাযোগ করলে সেখান থেকে তাকে জানানো হয় ইট তৈরিতে স্লাগ ব্যবহার করা সম্ভব। এরপর তিনি পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি কারখানার স্লাগ সংগ্রহ করে তা দিয়ে ইট তৈরি করেন ।
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষায় দেখা গেছে—ঐ ইটের গড় পিএসআই (শক্তিমাত্রা) ১৬০৪। আর ইটখোলাতে পোড়ানো সনাতনী পদ্ধতির সাধারণ ইটের শক্তির মাত্রা থাকে মানভেদে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ পিএসআই। সেখানে স্লাগ দিয়ে তৈরি হলো ব্রিকসের শক্তির মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পাওয়ার পর তিনি বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরুর উদ্যোগ নেন। জেডএইচ স্টার ব্রিকস অ্যান্ড ব্লকস লিমিটেড নামের এই কারখানাটি ২০২০ সালে স্থাপিত হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত জেলায় এই ধরনের চারটি আধুনিক প্রযুক্তির ‘নন-ফায়ারিং হলো ব্রিকস কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় বালু, সিমেন্ট ও পাথরের কুচি ব্যবহার করে সনাতনি পদ্ধতির ইট পোড়ানো ছাড়াও সলিড ইট, হলো ব্রিকস বা ব্লক তৈরি হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির এসব কারখানার একটিতেই এখন চলছে পাথরের কুচির বিকল্প হিসেবে ফার্নেস স্লাগের ব্যবহার।
ঢালাই কারখানার মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত একেকটি কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ কেজি বর্জ্য তৈরি হয়। বগুড়া ফাউন্ড্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আল মদিনা মেটাল ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মালেক আকন্দ জানান, তাদের সংগঠনভুক্ত ৭০টি কারখানা ছাড়াও বগুড়ায় ছোট- বড় প্রায় ১০০টি ঢালাই কারখানা রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক সুফিয়া নাজিম বলেন, ‘হলো ব্রিকস তৈরিতে এই বর্জ্যের ব্যবহার খুবই ভালো উদ্যোগ। কারণ এক দিকে এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবদান রেখে পরিবেশ ভালো রাখবে, একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব হলো ব্রিকস বা ব্লক তৈরির কাঁচামালের জোগানও স্থানীয়ভাবে মোকাবিলা করা যাবে।
এলজিইডি বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হলো ব্রিকস অনেক উন্নত এবং মজবুত। তবে দেখতে হবে এর গুণমান ঠিক রেখে তা তৈরি করা হচ্ছে কিনা? গুণমান ঠিক রেখে তৈরি করা হলো ব্রিকস’ দিয়ে বাড়ি ঘর বা অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে তা মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
Leave a Reply